হযরত আরিফবিল্লাহ্ মুফতী নুরুল আমীন সাহেব দাঃ বাঃ খলীফা-আরেফবিল্লাহ হযরত মাওলানা শাহ হাকীম মুহাম্মাদ আখতার সাহেব রহঃ এর - তত্ত্বাবধানে ও নির্দেশনায় : পরিপূর্ণ ঈমান লাভ এবং আল্লাহর পথের যাত্রীর জন্য পরীক্ষিত, গুরুত্বপূর্ণ ও আলোড়ন সৃষ্টিকারী কয়েকটি ছয় নম্বর : =========================== বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম নাহমাদুহু অনুছলি ‘আলা- রসূলিহিল্ কারীম। ঈমান একটি ব্যাপক অর্থবোধক পরিভাষা অর্থাৎ ঈমান একটি মৌলিক বস্তু। এর অনেক শাখা-প্রশাখা রয়েছে। আল্লাহ্ তা‘আলার বিধানাবলীকে অন্তরে বিশ্বাস করাকে ঈমান এবং ব্যক্তি জীবনে বাস্তবায়ন করাকে ইসলাম বলে। আন্তরিক ঈমান ব্যতিত ইসলাম অর্থাৎ বাস্তব আমল গ্রহণযোগ্য নয় আবার ইসলাম ব্যতিত শুধু ঈমানও যথেষ্ট নয়। ঈমান শুধু নির্দিষ্ট একটি বিষয়ের নাম নয় এবং এর অনেক শাখা-প্রশাখা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা‘আলার ইরশাদ, “হে ঈমানদারেরা তোমরা আল্লাহ্ তা‘আলার উপর পরিপূর্ণ ঈমান আনো এবং ঈমান আনো তাঁর রসূল ও তাঁর কিতাবের উপর যা তিনি নাযিল করেছেন তাঁর রসূলের উপর এবং সেই সমস্ত কিতাবের ওপর যেগুলি নাযিল করা হয়েছিল ইতিপূর্বে। আর যে আল্লাহ্ তা‘আলার ওপর, তাঁর ফেরেশতাগণের ওপর, তাঁর কিতাবসমূহের ওপর, রসূলগণের ওপর এবং কিয়ামত দিবসের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করবে না, সে পথভ্রষ্ট হয়ে বহু দূরে গিয়ে পড়বে। মহানবী সাল্লাল্লহু আলাইহি অসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “ ঈমানের ৭০ এর অধিক (কোন কোন বর্ণনায় ৭৭ টি) শাখা রয়েছে। তার মধ্যে সর্বোত্তম শাখা হলো ‘লা- ইলা- হা ইল্লাল্লহু’ পাঠ করা। আর সর্বনিম্ন হলো, রাস্তা হতে কোন কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা এবং লজ্জা ঈমানের একটি বিশেষ শাখা।” - (সিহাহ্ সিত্তাহ্) ঈমান ও ইসলামকে বাস্তবে রূপদান করার ক্ষেত্র বা স্থান একই, তবে সূচনা ও পূর্ণতার স্থানের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে অর্থাৎ ঈমান আরম্ভ হয় অন্তর থেকে এবং বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আমলের দ্বারা পূর্ণতা লাভ করে। অন্য দিকে ইসলাম বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আমল দ্বারা শুরু হয় আর অন্তরে গিয়ে শেষ হয়। অন্তরের ঈমান বা বিশ্বাস বাহ্যিক আমল পর্যন্ত না পৌঁছালে তা পূর্ণাঙ্গ হয় না ও আল্লাহর দরবারে গ্রহনযোগ্যতা লাভ করে না। অনুরূপভাবে বাহ্যিক আমল ও আনুগত্য আন্তরিক বিশ্বাসে না পৌঁছালেও তা গ্রহনযোগ্য হয় না। (তাফসীরে মা‘আরেফুল কুরআন সূরা বাক্বারা : ২-৪ আয়াত) বস্তুত (আন্তরিকভাবে আল্লাহ্ তা‘আলাকে একমাত্র উপাস্য এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লহু আলাইহি অসাল্লামকে তাঁর রসূল হিসাবে বিশ্বাস করার পর) ঈমানের ৭৭ টি শাখার বাস্তবায়নই দ্বীন। ঈমানের এ শাখাগুলির উপর আন্তরিক বিশ্বাস স্থাপন এবং তার সঠিক বাস্তবায়নের উপরই ছিল মহানবী সাল্লাল্লহু আলাইহি অসাল্লামের তেইশ বছরের মেহনত। রাসূল সাল্লাল্লহু আলাইহি অসাল্লামের ইন্তেকালের পর তাঁরই হাতে গড়া সাহাবায়ে কেরামের নূরানী কাফেলা এরপর তাবেঈন, তাবে- তাবেঈন, সলফে সালেহিন এবং উম্মতের মহান আকাবিরে দ্বীনের বিশাল জামা‘আত ঈমানের এ ৭৭ শাখার মেহনতকেই নিজেদের জিন্দেগীর মিশন বানিয়েছিলেন। উম্মতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লহু আলাইহি অসাল্লাম কিভাবে তাদের ব্যক্তি জীবনে, পারিবারিক জীবনে, সামাজিক জীবনে এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে ঈমানের ঐ ৭৭ শাখার বাস্তবায়ন করতে পারেন সেজন্য তাঁরা বিভিন্ন সময়ে সহজ কিছু পদ্ধতি বা কর্মকৌশল উপস্থাপন করেছেন। স্বয়ং আল্লাহ্ তা‘আলাও বান্দার ঈমানের পরিপূর্ণতার জন্য পবিত্র কুরআনের কয়েক জায়গায় কিছু সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রেরণ করেছেন। আকাবিরে দ্বীনের সেইসব মহান বুজুর্গদের সংক্ষিপ্ত দ্বীনি কর্মকৌশল মুসলিম জাতির ঈমানি চেতনার গতিপথ বদলে দিয়ে বিশ্বের সামনে সাহাবায়ে কেরামের গৌরবোজ্জল স্বর্ণালী যুগের ইতিহাসকে পুনরায় নতুনভাবে পেশ করতে সমর্থ হয়েছে। বুযুর্গদের এসকল পন্থা পৃথক ভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ না হলেও প্রতিটিরই চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো ঈমানের ঐ ৭৭ শাখার বাস্ত বায়ন। অর্থাৎ তাঁদের ঈমানি আন্দোলনের পথ ও পন্থা পৃথক হলেও উদ্দেশ্য ছিল একই। পথহারা উম্মতকে ঈমানের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছে দিতে তাঁদের এ সকল কর্মসূচী পরস্পর সাংঘর্ষিক নয় বরং সেগুলো একে অপরের সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। আমরা এখানে এরকম কিছু কর্মকৌশল একনজরে উপস্থাপন করছি। আল¬াহ্ তা‘আলা প্রদত্ত সূরা মুযযাম্মিলে সুলুক তথা আল্লাহর পথে চলার ছয়টি স্তর : (১) তাহাজ্জুদ (২) কুরআন তেলাওয়াত (৩) জিকির (৪) সমগ্র সৃষ্টি থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে কেবল আল্লাহর ইবাদাতে মগ্ন হওয়া (৫) তাওয়াক্কুল (৬) সবর করা আল¬াহ্ তা‘আলা প্রদত্ত সূরা আল্ মুদ্দাস্সিরে গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি নির্দেশ : (১) প্রস্তুতির সাথে জনশুদ্ধির দায়িত্ব পালন করা (২) আল্লাহর জিকির করা (৩) আপন দেহ ও মনকে বাহ্যিক অপবিত্রতা এবং আত্মিক রোগ থেকে মুক্ত রাখা (৪) গোনাহ্ পরিত্যাগ করা অর্থাৎ তাক্বওয়া (৫) প্রতিদানের আশায় কাউকে অনুগ্রহ না করা (৬) আল¬াহ্ তা‘আলার বিধি-বিধান প্রতিপালনে সবর করা। তাবলীগ জামা‘আতের প্রতিষ্ঠাতা হযরতজী মাওলানা মুহাম্মাদ ইলিয়াছ রহ. এর যুগান্তকারী ছয় নম্বর : (১) কালিমা (ঈমান) (২) নামায (৩) ইলম ও যিকির (৪) ইকরামুল মুসলিমীন (৫) সহীহ নিয়্যাত (নিয়তের বিশুদ্ধতা) (৬) তাবলীগ শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা যাকারিয়া রহ. কর্তৃক ‘ফাযায়েলে তাবলীগ’ কিতাবে প্রদত্ত ছয় নম্বর : (১) তা‘লীম বাসোহ্বাত (২) আযমতে ওলামা (৩) ইখলাস (৪) আখলাক (৫) ইসলাহে নফস (৬) তাবলীগ শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা যাকারিয়া রহ. কর্তৃক ‘ফাযায়েলে রমযান’ কিতাবে- ‘আমল কবুল হওয়ার জন্য প্রদত্ত ছয় নম্বর : (১) চোখের গোনাহ্ (কুদৃষ্টি) ত্যাগ করা (২) জবানের গোনাহ্ (কুকথা) ত্যাগ করা (৩) দিলের গোনাহ্ (কুধারণা) ত্যাগ করা (৪) অন্যান্য অঙ্গ- প্রত্যঙ্গের গোনাহ্ ত্যাগ করা (৫) হালাল-হারাম বেছে পরিমিত আহার করা (৬) মনে ভয় রাখা (আমল কবুল না হওয়ার) শাইখুল আরব ওয়াল আজম আরেফ বিল্লাহ শাহ্ হাকীম মুহাম্মাদ আখতার ছাহেব রহ. কর্তৃক সালিকিনদের জন্য প্রাথমিক নেসাব হিসাবে প্রদত্ত ছয় নম্বর : (১) সোহবতে আহলুল্লাহ (২) চোখের হেফাজত (৩) দাড়ি সুন্নাত তরীকায় রাখা (৪) দিলের গোনাহ্ থেকে বাঁচা (৫) ঠাখনুর উপরে কাপড় পরিধান করা (৬) সহীহ কুরআন তেলাওয়াত করা হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদুল মিল¬াত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ. কর্তৃক ইসলাহে উম্মতের জন্য ‘জাযাউল ‘আমাল’ কিতাবে প্রদত্ত করণীয় ছয় নম্বর : (১) সোহবতে আহলুল্লাহ (২) সহীহ ইলম শিক্ষা করা (৩) সুন্নাত তরীকায় নামায আদায় (৪) মুহাসাবা-মুরাকাবা (৫) ইস্তেগফার ও তাওবায়ে নাসূহ (৬) কম কথা বলা ও কম মেলামেশা করা বর্জনীয় ছয় নম্বর : (১) চোখের গোনাহ্ (২) কিব্র (নিজেকে বড় এবং অন্যকে হেয় মনে করা) (৩) জুলুম (৪) বদরাগ (৫) হারাম খানা খাওয়া (৬) গীবত